মাহবুব আলম, অষ্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলায় টাইফয়েড টিকা কার্যক্রমে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ের নিবন্ধন আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (DGHS) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১১ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ৯টা পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধিত হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৪৩ হাজার ৫৪২ জন। এর মধ্যে স্কুল পর্যায়ে ১ কোটি ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ৮৫৬ জন এবং কমিউনিটি পর্যায়ে ৪৭ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮৬ জন।
তবে টিকা গ্রহণ করেছে মাত্র ৬১২ জন-এর মধ্যে স্কুলে ১৭৬ জন ও কমিউনিটিতে ৪৩৬ জন।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. অভিজিত শর্মা জানান, জেলার ১৩টি উপজেলায় ৯ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৪ জন শিশুকে টাইফয়েড টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩১ শতাংশ নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে এক মাসব্যাপী এ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। এতে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের ১ ডোজ টিসিভি টিকা দেওয়া হবে ।
অষ্টগ্রাম উপজেলায় অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিবন্ধনের অগ্রগতি প্রায় স্থবির অবস্থায় রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যমতে, অষ্টগ্রাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র ৬ জন, অষ্টগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৫৭ জন এবং অষ্টগ্রাম হোসানিয়া আলীম মাদ্রাসায় ৭৮ জন শিক্ষার্থী।
সদরের বাহিরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে টিকা নিবন্ধনের আরও বেহাল অবস্থা।
এছাড়া সদর ইউনিয়নের সোনাই দিঘীর পাড়, হাবলিপাড়া, কণিকপাড়া, বর্ধমানপাড়া, আরারগাড়, কাজীপাড়া ও দালানহাটি এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও অগ্রগতি তেমন দেখা যায়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মহিবুল্লাহ বলেন, “টাইফয়েড প্রতিরোধে এই টিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ে নিবন্ধনের গতি এখনও আশানুরূপ নয়। আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে নিবন্ধন বুথ চালু করেছি এবং সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনার চেষ্টা করছি। অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবেই এমন হয়েছে।আশা করছি খুব শিঘ্রই আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে, অষ্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় ৫৩ শতাংশ শিশু নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
শিক্ষা বিভাগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না, যার ফলে নিবন্ধন ধীরগতিতে চলছে।
টিকাদান কার্যক্রম সফল করতে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে—
১. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মাইক্রোপ্ল্যান তৈরি ও সংরক্ষণ।
২. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানুয়াল নিবন্ধনে সহায়তার নির্দেশ।
৩. উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে নিবন্ধন বুথ চালু।
৪. মাদ্রাসা পর্যায়ে বিশেষ টিমের মাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রম।
৫. আইটি টিমের মাধ্যমে টিকাদানের আগের দিন নিবন্ধন সহায়তা।
৬. মনিটরিংয়ের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন।
৭. ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা তৈরি করে নিবিড় পর্যবেক্ষণ।
৮. কওমী ও আলিয়া মাদ্রাসা, মডেল মসজিদ ও মহিলা মাদ্রাসায় বিশেষ নজর।
৯. মহিলা মাদ্রাসায় টিকা কার্যক্রমে মহিলা কর্মী নিয়োগ।
১০. এক্সেল শিটে পূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ ও সুপারভিশন জোরদার।
ডা. মহিবুল্লাহ আরও জানান, “কর্মসূচি সচল রয়েছে। নিয়মিত সভা, মনিটরিং ও ফলোআপের মাধ্যমে অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার চেষ্টা চলছে। আশা করা যাচ্ছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নিবন্ধন ও টিকাদান কার্যক্রমে দৃশ্যমান অগ্রগতি আসবে।”
স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, স্বাস্থ্য বিভাগ ও শিক্ষা প্রশাসন যৌথভাবে প্রচারণা বাড়ালে অষ্টগ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষার্থীরা দ্রুত টিকার আওতায় আসবে।