সাব্বির আহমদ মানিক, বাজিতপুর প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের শিল্প বিপ্লবের অগ্রদূত, দানবীর, সমাজসেবক ও মানবতার পথিকৃৎ আলহাজ্ব জহুরুল ইসলামের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
আজ রবিবার (১৯ অক্টোবর ২০২৫) সকালে জহুরুল ইসলাম হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। জহুরুল ইসলাম নার্সিং কলেজ মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কলেজের অধ্যক্ষ আলপনা আক্তার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নার্সিং কলেজের মহাপরিচালক আজহারুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন জহুরুল ইসলাম হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক বাহাউদ্দিন ভূঁইয়া, অধ্যাপক সাঈদ হাসান মো. শামসুর রহমান প্রমুখ। সভায় মরহুম আলহাজ্ব জহুরুল ইসলামের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাঁর অসামান্য অবদান নিয়ে আলোচনা করা হয়।
মহাপরিচালক আজহারুল ইসলাম ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য রাখেন এবং মরহুমের জীবন ও কর্মের ওপর আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। আলোচনা শেষে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অতিথিবৃন্দ হাসপাতাল জামে মসজিদে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন এবং পরবর্তীতে মরহুমের কবর জিয়ারত করেন। এদিন বিশেষ আয়োজনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একদিনের জন্য সকল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ফি ও পরীক্ষা- নিরীক্ষায় ৫০% ছাড়ের ঘোষণা দেয়।
দেশের শিল্প ও মানবকল্যাণে অমর দানবীর ১৯২৮ সালের ১ আগস্ট কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর পৌরসভার ভাগলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আলহাজ্ব জহুরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন ইসলাম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশের বেসরকারি শিল্প-বাণিজ্য খাতের এক কিংবদন্তি উদ্যোক্তা। দেশের ব্যাংক, সুপ্রিম কোর্ট ভবন, সংসদ ভবন, গণভবন, এমপি হোস্টেলসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তাঁর তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড, আফতাব বহুমুখী ফার্ম, বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন, ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশনসহ বহু শিল্প- প্রতিষ্ঠান, যা দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বাঙালি উদ্যোক্তা হিসেবে আন্তর্জাতিক নির্মাণ ব্যবসা শুরু করে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেন তিনি।
ধর্ম ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডেও তাঁর অবদান ছিল অনন্য। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে কিশোরগঞ্জে দুই শতাধিক লঙ্গরখানা খুলে পাঁচ মাস ধরে অভুক্ত মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করেন তিনি।নিজ অর্থে বহু মসজিদ, মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন এই মহান দানবীর। নিজের জন্মভূমি বাজিতপুরে তিনি গড়ে তোলেন জহুরুল ইসলাম হাসপাতাল,ও নার্সিং কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার কল্যাণে বাজিতপুর আজ “শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের নগরী” হিসেবে পরিচিত।
১৯৯৫ সালের ১৯ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই মহান ব্যক্তিত্ব। বর্তমানে তাঁর সুযোগ্য পুত্র মনজুরুল ইসলাম বাবলু ইসলাম গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। দোয়া ও স্মরণ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে মরহুম আলহাজ্ব জহুরুল ইসলামের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। পাশাপাশি সুযোগ্য উত্তরসূরি মনজুরুল ইসলাম বাবলুর দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের জন্য দোয়া প্রার্থনা করা হয়।