মাহবুব আলম, অষ্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জের হাওরবেষ্টিত অষ্টগ্রাম উপজেলার সর্বস্তরের অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সচেতন মহল স্নাতক (ডিগ্রী) পর্যায়ের পরীক্ষার কেন্দ্র স্থানীয়ভাবে ইটনা, মিটামইন অথবা অষ্টগ্রামের যেকোনো স্থানে নির্ধারণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
বর্তমানে অষ্টগ্রাম উপজেলার শিক্ষার্থীদের ডিগ্রী পরীক্ষায় অংশ নিতে কুলিয়ারচর উপজেলার পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হয়, যা দূরত্বে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার। হাওরাঞ্চল হওয়ায় যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌপথ ও আংশিক সড়কপথ, ফলে পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে তীব্র ঢেউ, ঝড়-বৃষ্টি ও অনিশ্চিত নৌপথে যাত্রা তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
অষ্টগ্রাম ডিগ্রী কলেজসহ আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিদিনের মতো পরীক্ষার সময়ও তাদের ভোররাতে বাড়ি থেকে রওনা হতে হয়। অনেক সময় আবহাওয়ার কারণে কেন্দ্রে পৌঁছাতে বিলম্ব হয় বা কেউ কেউ পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকে। এতে শিক্ষার মান ও ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
স্থানীয় অভিভাবক প্রতিনিধি আব্দুল মান্নান বলেন, “আমাদের সন্তানদের কুলিয়ারচর পর্যন্ত যেতে হয়, যা হাওরের মাঝ দিয়ে দীর্ঘ নৌপথ। নৌযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ, আর খরচও অনেক বেশি। আমরা চাই, পরীক্ষার কেন্দ্র অষ্টগ্রাম, মিটামইন বা ইটনার কোনো কলেজে করা হোক।”
অষ্টগ্রাম ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “আমাদের কলেজে পর্যাপ্ত অবকাঠামো, শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক জনবল আছে। প্রশাসন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিলে এখানে ডিগ্রী পরীক্ষার কেন্দ্র আয়োজন সম্ভব।”
উল্লেখ্য, প্রতি বছরের মতো গতকাল (১৩ অক্টোবর ২০২৫) সরকারি রোটারি ডিগ্রী কলেজের প্রায় ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী বাজিতপুর থেকে নৌপথে কুলিয়ারচরগামী পথে যাত্রা করার সময় দিক হারিয়ে বিস্তীর্ণ হাওরে প্রায় ৭ ঘণ্টা আটকা পড়ে। পরে অষ্টগ্রাম থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও ৯৯৯ এ কলের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুবাজাইল নৌ-পুলিশের যৌথ সহযোগিতায় রাত ২টার দিকে আটকা পড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সফলভাবে উদ্ধার করা হয়।
শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, হাওরাঞ্চলের বিশেষ ভৌগোলিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা প্রশাসনের উচিত দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে অষ্টগ্রাম, ইটনা বা মিটামইনের যেকোনো কলেজে স্থানীয় পরীক্ষাকেন্দ্র অনুমোদন করা, যাতে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারে।